হিসেবের খাতা যখনই হাতে নিয়েছি , তাতে দেখি শুধুই রক্তক্ষরন, মাঝে মাঝে হঠাৎ চমকে উঠে ভাবি, আরে, কোথায় ছিলাম আমি? কোথায় ছিলাম? সে যে এক গভীর নীল স্নিগ্ধ জগৎ। সেখানে এক অদ্ভুত আলো ছিলো। ছিল এক বিচিত্র সুন্দর শব্দ। সেই আমার জগৎ থেকে কে আমাকে এখানে আনলো? কেন আনলো এই মৃত্যুশীলতার মধ্যে, যে পথ দিয়ে আমি এসেছিলাম সেই পথের দুধারে ছিল অনেক তারা নক্ষত্র, সেই বীথিপথটি অনন্ত থেকে ঢলে গেছে অনন্তে। তার শুরু নেই, শেষও নেই। সেই পথে চলতে চলতে কেন আমি থেমে গেলাম? নেমে এলাম এইখানে?
আকাশে ঘনিয়ে আসে বর্ষার গাঢ় মেঘ। ঘন মেঘের ছায়া পড়ে চারধারে। বর্ষার ব্যাঙ ডাকে। বৃষ্টি নামে। আমি আমার দরজার চৌকাঠে বসে সেই বৃষ্টির দৃশ্য দেখি। কোন দূর থেকে বৃষ্টির ফোঁটা গুলি আসে? গাঢ় ভালোবাসায় মাখে মাটিকে, ভিজিয়ে দেয় গাছপালা। ্বৃষ্টির শব্দে যেন কোন ভালোবাসার কথা বলা হতে থাকে। ওই যে বর্ষার ব্যাঙ ডাকে, গাছপালার শব্দ হয়, আমি প্রান দিয়ে শুনি। মনে হয়, ওই ব্যাঙের ডাক মেঘকে ডেকে আনে, গাছপালা তাঁকে আকর্ষন করে, মাটিতে টেনে নামায় মেঘ থেকে জল, এরকম টান ভালোবাসার ওপরই চলছে সংসার। আমি চৌকাঠে বসে থাকি, চোখের পলক পড়েনা, আমি দেখি শীতের কুয়াশা, বৈশাখের ঝড়।
মাঝরাতে বাগানের ছায়াগুলো বেঁকে ভেঙ্গে যাচ্ছিলো। জ্যোৎস্না তীব্র হয়েছে। ফুলের গন্ধ গাঢ়, মন্থর হয়েছে বাতাস। দুঃখীদের জন্য স্বপ্নের সন্ধানে বেরিয়েছেন ঈশ্বর, আনাচে-কানাচে ঘুরে তিনি চরাচর থেকে স্বপ্নদের ধরেন নিপুন জেলের মতন। আঁজলা ভরা সেই স্বপ্ন তিনি আবার ছড়িয়ে দেন। মাঝরাতে তারার গুঁড়োর মত সেই স্বপ্নেরা ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীতে।
মানুষের মধ্যে সবসময়ই একটা ইচ্ছে বরাবরই চাপা থেকে যায়। সেটা হচ্ছে সর্বস্ব দিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে। কোথাও কেউ একজন বসে আছেন প্রসন্ন হাসিমুখে, তিনি আমার কিছুই চান না, তবু তাঁকে আমার সর্বস্ব দিয়ে দেওয়ার কথা। টাকা-পয়সা নয়, আমার বোধ-বুদ্ধি-লজ্জা-অপমান-জীবনমৃত্যু-সবকিছু। বদলে তিনি কিছুই দেবেন না, কিন্তু দিয়ে আমি তৃপ্তি পাব। রোজগার করতে করতে, সংসার করতে করতে মানুষ সেই দেওয়ার কথাটা ভুলে যায়। কিন্তু কখনও মানুষ মরবার সময়ে দেখে, সে দিতে চায়নি, কিন্তু নিয়তি কেড়ে নিচ্ছে, তখন মনে পড়ে, এর চেয়ে স্বেচ্ছায় দেওয়া ভালো ছিল।
style="display:block"
data-ad-client="ca-pub-2221917604703020"
data-ad-slot="3174276807"
data-ad-format="auto">
আকাশে ঘনিয়ে আসে বর্ষার গাঢ় মেঘ। ঘন মেঘের ছায়া পড়ে চারধারে। বর্ষার ব্যাঙ ডাকে। বৃষ্টি নামে। আমি আমার দরজার চৌকাঠে বসে সেই বৃষ্টির দৃশ্য দেখি। কোন দূর থেকে বৃষ্টির ফোঁটা গুলি আসে? গাঢ় ভালোবাসায় মাখে মাটিকে, ভিজিয়ে দেয় গাছপালা। ্বৃষ্টির শব্দে যেন কোন ভালোবাসার কথা বলা হতে থাকে। ওই যে বর্ষার ব্যাঙ ডাকে, গাছপালার শব্দ হয়, আমি প্রান দিয়ে শুনি। মনে হয়, ওই ব্যাঙের ডাক মেঘকে ডেকে আনে, গাছপালা তাঁকে আকর্ষন করে, মাটিতে টেনে নামায় মেঘ থেকে জল, এরকম টান ভালোবাসার ওপরই চলছে সংসার। আমি চৌকাঠে বসে থাকি, চোখের পলক পড়েনা, আমি দেখি শীতের কুয়াশা, বৈশাখের ঝড়।
মাঝরাতে বাগানের ছায়াগুলো বেঁকে ভেঙ্গে যাচ্ছিলো। জ্যোৎস্না তীব্র হয়েছে। ফুলের গন্ধ গাঢ়, মন্থর হয়েছে বাতাস। দুঃখীদের জন্য স্বপ্নের সন্ধানে বেরিয়েছেন ঈশ্বর, আনাচে-কানাচে ঘুরে তিনি চরাচর থেকে স্বপ্নদের ধরেন নিপুন জেলের মতন। আঁজলা ভরা সেই স্বপ্ন তিনি আবার ছড়িয়ে দেন। মাঝরাতে তারার গুঁড়োর মত সেই স্বপ্নেরা ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীতে।
মানুষের মধ্যে সবসময়ই একটা ইচ্ছে বরাবরই চাপা থেকে যায়। সেটা হচ্ছে সর্বস্ব দিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে। কোথাও কেউ একজন বসে আছেন প্রসন্ন হাসিমুখে, তিনি আমার কিছুই চান না, তবু তাঁকে আমার সর্বস্ব দিয়ে দেওয়ার কথা। টাকা-পয়সা নয়, আমার বোধ-বুদ্ধি-লজ্জা-অপমান-জীবনমৃত্যু-সবকিছু। বদলে তিনি কিছুই দেবেন না, কিন্তু দিয়ে আমি তৃপ্তি পাব। রোজগার করতে করতে, সংসার করতে করতে মানুষ সেই দেওয়ার কথাটা ভুলে যায়। কিন্তু কখনও মানুষ মরবার সময়ে দেখে, সে দিতে চায়নি, কিন্তু নিয়তি কেড়ে নিচ্ছে, তখন মনে পড়ে, এর চেয়ে স্বেচ্ছায় দেওয়া ভালো ছিল।
style="display:block"
data-ad-client="ca-pub-2221917604703020"
data-ad-slot="3174276807"
data-ad-format="auto">



কিছু ঘটনা আমাদের অজান্তেই আমাদের হঠাৎ আলতো করে নাড়িয়ে দিয়ে যায়, বুঝতে পারি জীবনটা বড্ড বেশি ক্ষনস্থায়ী, আঙুলের ফাঁকগলে কখন যে সোনালী মুহুর্তগুলো উড়ে গেলো…
আজকাল কোনো কারন ছাড়াই বড্ড মন খারাপ করে, মনকেমনের পাখিরা ভীড় করে আছে পুরো আকাশ জুড়ে। যখন মনখারাপের মেঘগুলো নদীর দুকুল ছাপিয়ে যায়, তখন তোর কথা বড় বেশিই মনে পড়ে। খুব ইচ্ছে করে তোর কাছে ফিরে যাই।
জীবনে কিছু কিছু ঋন আছে যা কোনদিনই শোধ করা যায়না, শুধু স্বীকার করা যায় মাত্র। তোর কাছে আমি তেমনই একটা ঋনে ঋণি।
নিজের ভেতরেই আছে অলৌকিক। কখনও কখনও তাকে টের পাওয়া যায়। তাই তুমি একবার স্বপ্নে এক জনহীন প্রান্তুরে দাঁড়িয়ে এক নীল অতি সুন্দর বর্নের উড়ন্ত সিংহকে তোমার নিকটবর্তী হতে দেখে ভয় পেয়েছিলে। অথচ ভয়ের কোনো কারন ছিল না, কেন না সেই সিংহের নীল কেশর, নীল চোখ ও নীল নখ সবই হিংস্রতা শূন্য ছিল। এবং সেই নীলবর্নের সিংহের বাসস্থান ছিল না বলে সে অতি নম্র ভাবে তোমার সামনের ভূমি স্পর্শ করে তোমার কাছে একটি বাসস্থানের সন্ধান জানতে চায়, কেননা তুমি এই পৃথিবীর আইনসম্মত বসবাসকারী।
পুরোনো আড্ডা সবই ভেঙ্গে গেছে। বাইরের পৃথিবীটা আর আগের মত নেই। বড্ড পর হয়ে গেছে সব। বেলা গড়িয়ে যায়। রৌদ্রতপ্ত ঘাসে নিবিড় গাছপালায় বনের গন্ধ ঘনিয়ে ওঠে। তাপ মরে আসে। ঘামে ভেজা শরীরে শীতের বাতাস এসে লাগে। বুঝতে পারি ফেরার সময় হল।
কালো চশমার ভেতর দিয়ে আমি কালচে শহরটাকে দেখি।
শীতের শেষে বসন্তের গোড়ার দিক, তখন বাতাসে টান লেগেছে। শুকনো পাতারা টুপটাপ করে ঝরে শেষ হয়েছে। খেতে মটর শাকে পাক ধরেছে। যারা শুকনো কাঠ-পাতা কুড়োতে যেত তাদের দিন গেল।



মাথা অনেক বেশি শূন্য লাগছে আজকাল। যেন একখানা খোলামেলা ফাঁকা ঘর। মাঝে মাঝে শুধু একটি কি দুটি শালিক অথবা চড়ুইয়ের আনাগোনা। এরকম থাকা ভাল। আমি জানি। কালকেও আমার কাছে একখানা বেনামি চিঠি এসেছে। তাতে লেখা " বিপ্লবের পথ কেবলই গার্হস্থের দিকে বেঁকে যায়। বনের সন্ন্যাসী ফিরে আসে ঘরে।" নাম সই নেই, তবু আমি হাতের লেখা চিনি।
আমার বিশ্বাস, মানুষের জীবনে ইচ্ছাপুরনের ঘটনা এক-আধবার ঘটে। যেন তখন সমস্ত পৃথিবীকে উপেক্ষা করে ঈশ্বর অলক্ষ্যে তার কাছেই এসে দাঁড়ান। তখন মানুষের মনে যে পার্থনা থাকে তা পুরন করে দিয়ে চলে যান। সেই শুভক্ষনটাকে মানুষ অবশ্য চিনতে পারেনা। সে হয়ত তখন ভাবছে, ইস, কাল যে ছাতাটা অফিসে ফেলে এলাম তা কি আর ফিরে পাওয়া যাবে?
আমি আমার হারানো শহরকে খুঁজে পাইনা, সেই কবে আমার শহর থেকে দেখা এক রহস্যময় মহাপর্বত মেঘের মতো ডেকেছিল, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তা কোথায় কোন সুদুরে চলে গেছে। কতবার মনে হয় ফিরে আসি... এ শহর তো নয়, আমার সেই শৈশবের চোখে একটা শহরের ছবি আঁকা হয়ে গিয়েছিল কল্পনায়। কিছুতেই সে ছবি মিলিয়ে যায় না। সে এক অদ্ভুত সুন্দর ম্লান- আলোর উপত্যকা, চারধারে নীল পাহাড় হাসিমুখে চেয়ে আছে, শহরের মাঝখান দিয়ে নদী। নদির উপর ঝুলন্ত পোল। আকাশে রামধনু-রঙা নানা বর্নের মেঘ ভেসে যায়। পথে পথে স্থল পদ্ম ফুটে থাকে। রাস্তা আকির্ণ করে থাকে ঝরা ফুলে। মানুষ সেখনে জেগেও স্বর্গের ভেতর বাস করে।
ন
অনিমেষ যথেষ্ট কাজের ছেলে ছিল। বিষয়ী লোক, টাকা-পয়সার হিসেব ভালো বুঝত। ভাসানের সময় যখন সবাই সিদ্ধি খেয়ে নাচতে ব্যস্ত তখন লাইটিং-এর ভ্যান-রিক্সা ঠিক-ঠাক রাস্তা পার করানো, ট্র্যাফিক সামলানো এসবে তার আগ্রহ ও নিষ্ঠা দুটোই ছিল দেখার মত। ক্লাবের পিকনিকে মাতাল বন্ধুদের সে দায়িত্ব সহকারে বমি করাত, সামনে প্লাস্টিকের বালতি ধরত। পাড়ার ফাংশানে আর্টিস্টদের জন্য টিফিনের প্যাকেট থেকে শুরু করে ২৬শে জানুয়ারীর পতাকা-ফুলের দরদাম, অনিমেষ ছাড়া গতি ছিল না। তাই ও গাড়ী চাপা পড়ার পর আমাদের ফাইভ-এ-সাইড ফুটবল টুর্নামেন্ট ওর নামে করতে আমাদের বেশি ভাবতে হয়নি। তাছাড়া আমি হিসেব করে দেখেছিলাম ৭ নম্বর স্ট্রীটের গোপালের বাবার গায়ে আগুন লাগানোর পর অনিমেষই ছিল ফার্স্ট কেস। তার পরেও এ তল্লাটে আর কেউ অমন অপঘাতে মরেনি। সেই ৮৮’ সালেও অনিমেষের কালার ফোটো তোলানো ছিল। অতসীর জন্য। সেটা আমিই ফ্রেমে বাঁধিয়েছিলাম। চার পেয়ে কাঠের টেবিলে ফুলের মালা পরে হাসিমুখে বসে থাকে অনিমেষ প্রতি ১৫ই আগস্ট, কপালে চন্দনের ফোঁটা। ৬ বছর হয়ে গেল। এই ভাবে দুটো ওয়ার্ল্ড কাপ পার করে দিল। কে আবার ওর নামের সাথে ‘শহীদ’ জুড়ে দেওয়ায় রমরমা হয়ে যায়। ফ্রেম বাঁধানোর টাকাটা আমি অভ্যেসবশত মেরে দিয়েছিলাম। ওটা নিছকই রিফ্লেক্স। অনিমেষ ভালো বন্ধু ছিল আমার। আমি অতসীদের ভাড়াটে, আমাকে ছাড়া ওর চলত না। অতসীকে চিঠিও আমাকেই লিখতে হত। চিঠি হাত বদলও আমিই করে এসেছি বরাবর। তবে অনিমেষের মৃত্যুর খবর আমি অতসীকে দিতে পারিনি। আমি তখন দোকানে বসে। পল্টু সবার আগে অতসীর বাবাকেই খবরটা দেয়। এই একটাই সুযোগ ও পেয়েছিল অতসীদের বাড়ী ঢোকার। ওকে দোষ দিই না। আমারই কপাল খারাপ। অতসী নাকি বড়জোর সাড়ে চার সেকেন্ড হতভম্ব থেকেই কাঁদা শুরু করেছিল। পল্টুর মতে সিনেমার সাথে কিছুই মেলেনি। সিঁড়িতে ধপ করে বসেও পড়েনি অতসী। অজ্ঞান হতে হতে সন্ধ্যে হয়ে গেছিল। আমি তার বছর দুই আগে পাড়ায় আসি। আমার দোকান। অতসীর প্রেম সেবার পূজোয়। ১৯৮৮ সাল।