যে পাখির আকাশ নেই
আজকাল কোনো কারন ছাড়াই বড্ড মন খারাপ করে, মনকেমনের পাখিরা ভীড় করে আছে পুরো আকাশ জুড়ে। যখন মনখারাপের মেঘগুলো নদীর দুকুল ছাপিয়ে যায়, তখন তোর কথা বড় বেশিই মনে পড়ে। খুব ইচ্ছে করে তোর কাছে ফিরে যাই।
বকুল, তুই হয়তো জানিস না, আমার শৈশবের নদীটাও হারিয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে ছেলেবেলার চিলেকোঠা। এইতো গতবছর বন্যায় আমার প্রিয় আকাশমণি গাছটাও ভেসে গেলো। অনেক কিছুই হারিয়ে গেলো, সকাল, দুপুর, রাত। আজকাল আর কোনো কিছুই হারানোর ভয় কাজ করে না।
আজকাল বাবা’র জন্য খুব মনকেমন করে। কলেজের ফার্স্ট সেমিস্টারের একটা অথবা দু’টো পেপার শেষ হয়েছে, পরীক্ষা দিয়ে হস্টেলে ফিরছি, তখনই মায়ের ফোন, বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। নাহ, আমার আর হস্টেলে ফেরা হয়নি, বাড়ি ফিরে বাবার শেষ কাজ সম্পন্ন করে ফিরলাম কলেজে। দু’টো পেপার দিতে পারিনি।
এই কথাগুলো কাউকেই বলতে পারিনা, বাবা’র চিতার ধোঁয়াগুলো যখন পাক খেতে খেতে আকাশে মিশে যাচ্ছিলো তখন বাবার জন্য দু:খ হয়নি, মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলো দুটো এক্সাম পেপার মিস হয়ে যাওয়াটা। একটা মানুষ কতটা স্বার্থপর হতে পারে তাই না!
বাবাকে নিয়ে বিশেষ কোনো ঘটনা আমার মনে পড়েনা, আজও আমি স্মৃতি হাতড়ে বেড়াই, খুঁজে বেড়াই …
আমি অপেক্ষা করি, থাক বলবনা কিসের অপেক্ষা করছি। ভর সন্ধ্যেয় যখন চারিদিকে হাহাকার ধ্বনি ধ্বনিত হয়ে থাকে তখন ব্যক্তিগত অপেক্ষার কথা বলতে হয় না।
পৌনঃপুনিকতা বড্ড বাজে জিনিস; জীবনে কোনো গল্প নেই, জীবনটাকে একটা সরলরেখা হিসেবে চিন্তা করে সময়নিরপেক্ষ যে কোনো একটা অংশ তুলে নিলেই পুরো জীবনের রেপ্লিকা পাওয়া যাবে। কোনো গল্প নেই, কোনো বিশেষ ঘটনা নেই; বড্ড খারাপ।
শহরের কোনো পুকুরের পাড়ে মাটি নেই। সেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মাঝে আমি বসে থাকবো; একা এবং একাকী। পুকুরের পাশ দিয়ে চলে গেছে কালো পিচ মোড়ানো একটা পথ, সেই পথটাও ফাঁকা থাকবে। আমি বৃষ্টির মাঝে তাকিয়ে দেখবো নীলছাতা মাথায় দিয়ে গুটিগুটি পায়ে কে যেন এগিয়ে আসছে।
মন, অনেক বড় বড় শহর দেখেছো তুমি; সেই সব শহরের ইট পাথর, কথা কাজ আশা নিরাশার ভয়াবহ হৃত চক্ষু আমার মনের বিঃস্বাদের ভেতর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে; কিন্তু তবুও শহরের বিপুল মেঘের কিনারে সূর্য্য উঠতে দেখেছি, বন্দরের ওপারে সূর্য্যকে দেখেছি মেঘের কমলা রঙের ক্ষেতের ভিতর প্রণয়ী চাষার মত বোঝা রয়েছে তার; শহরের গ্যাসের আলো উঁচু উঁচু মিনারের উপরও দেখেছি, নক্ষত্রেরা অজস্র বুনো হাঁসের মত কোন দক্ষিন সমুদ্রের দিকে উড়ে চলেছে। হায় মেঘ, পর্যটক কুমারী মেঘ, তুমি উড়ে গেলে সবুজ কান্না ঝরবে নীলকন্ঠ পাখির চোখে।
এই শহরের কঠিন আস্তরনের উপর ঋতুচক্র তার কেরামতি দেখাতে পারে না। বুড়ো যাদুকরের মত সে ধুঁকতে ধুঁকতে আসে বটে, কিন্তু পরনের ছেঁড়া পাতলুন নোংরা জামা পথে পথে ঘুরে বেড়িয়ে ফিরে যেতে হয় তাকে। এ শহর তার জায়গা নয়। একটা মস্ত শিউলি গাছে শরৎকালে অজস্র ফুল ফোটে বটে, কিন্তু সেই গাছটার তলায় ডাই হয়ে জমে থাকে আবর্জনা, ময়লা জল। গাছ ফুল ফোটায়, ফুল ঝরায়, কেউ ফিরেও তাকায় না। শুধু আমি লোভির মত চেয়ে থেকে ভাবি এক আঁজলা যদি পাওয়া যেত।
মাঝরাতে অন্ধকার এক জংশনে গাড়ি থেকে নামি। ঘোর অন্ধকার প্লাটফর্ম পেরিয়ে ওপাশে এক অন্ধকার ট্রেনের কামরায় উঠি; একা। ট্রেন ছাড়ে, দুলে দুলে চলে। কোথায় যাচ্ছি তা প্রশ্ন করতে নেই। কেউ জবাব দেবে না। কিন্তু জানিস বকুল, জানালায় তোর মুখ ভেসে ওঠে, করুন তীব্র এক স্বরে তুই বলিস “ পৃথিবী আর সুন্দর থাকবে না যে; ফুল ফুটবে না আর, ভোর আসবে না।” আমি একটু হাসবার চেষ্টা করি, বলি, বড় মারে এরা; বড্ড ভুল বোঝে। প্রত্যাখান করে। তার চেয়ে এই লম্বা ঘুমই ভালো। অনেক দিন ধরে আমি এইরকম ঘুমিয়ে পড়তে চাইছি।
style="display:block"
data-ad-client="ca-pub-2221917604703020"
data-ad-slot="5898435076"
data-ad-format="auto">
বকুল, তুই হয়তো জানিস না, আমার শৈশবের নদীটাও হারিয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে ছেলেবেলার চিলেকোঠা। এইতো গতবছর বন্যায় আমার প্রিয় আকাশমণি গাছটাও ভেসে গেলো। অনেক কিছুই হারিয়ে গেলো, সকাল, দুপুর, রাত। আজকাল আর কোনো কিছুই হারানোর ভয় কাজ করে না।
আজকাল বাবা’র জন্য খুব মনকেমন করে। কলেজের ফার্স্ট সেমিস্টারের একটা অথবা দু’টো পেপার শেষ হয়েছে, পরীক্ষা দিয়ে হস্টেলে ফিরছি, তখনই মায়ের ফোন, বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। নাহ, আমার আর হস্টেলে ফেরা হয়নি, বাড়ি ফিরে বাবার শেষ কাজ সম্পন্ন করে ফিরলাম কলেজে। দু’টো পেপার দিতে পারিনি।
এই কথাগুলো কাউকেই বলতে পারিনা, বাবা’র চিতার ধোঁয়াগুলো যখন পাক খেতে খেতে আকাশে মিশে যাচ্ছিলো তখন বাবার জন্য দু:খ হয়নি, মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলো দুটো এক্সাম পেপার মিস হয়ে যাওয়াটা। একটা মানুষ কতটা স্বার্থপর হতে পারে তাই না!
বাবাকে নিয়ে বিশেষ কোনো ঘটনা আমার মনে পড়েনা, আজও আমি স্মৃতি হাতড়ে বেড়াই, খুঁজে বেড়াই …
আমি অপেক্ষা করি, থাক বলবনা কিসের অপেক্ষা করছি। ভর সন্ধ্যেয় যখন চারিদিকে হাহাকার ধ্বনি ধ্বনিত হয়ে থাকে তখন ব্যক্তিগত অপেক্ষার কথা বলতে হয় না।
“দুঃখ তোমার কেড়ে নিতে চায় যত
এমন একটা নাছোড়বান্দা ছেলে
সুখের দিনে নাইবা পেলে পাশে
খবর দিও হঠাৎ কান্না পেলে”
শহরের কোনো পুকুরের পাড়ে মাটি নেই। সেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মাঝে আমি বসে থাকবো; একা এবং একাকী। পুকুরের পাশ দিয়ে চলে গেছে কালো পিচ মোড়ানো একটা পথ, সেই পথটাও ফাঁকা থাকবে। আমি বৃষ্টির মাঝে তাকিয়ে দেখবো নীলছাতা মাথায় দিয়ে গুটিগুটি পায়ে কে যেন এগিয়ে আসছে।
মন, অনেক বড় বড় শহর দেখেছো তুমি; সেই সব শহরের ইট পাথর, কথা কাজ আশা নিরাশার ভয়াবহ হৃত চক্ষু আমার মনের বিঃস্বাদের ভেতর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে; কিন্তু তবুও শহরের বিপুল মেঘের কিনারে সূর্য্য উঠতে দেখেছি, বন্দরের ওপারে সূর্য্যকে দেখেছি মেঘের কমলা রঙের ক্ষেতের ভিতর প্রণয়ী চাষার মত বোঝা রয়েছে তার; শহরের গ্যাসের আলো উঁচু উঁচু মিনারের উপরও দেখেছি, নক্ষত্রেরা অজস্র বুনো হাঁসের মত কোন দক্ষিন সমুদ্রের দিকে উড়ে চলেছে। হায় মেঘ, পর্যটক কুমারী মেঘ, তুমি উড়ে গেলে সবুজ কান্না ঝরবে নীলকন্ঠ পাখির চোখে।
এই শহরের কঠিন আস্তরনের উপর ঋতুচক্র তার কেরামতি দেখাতে পারে না। বুড়ো যাদুকরের মত সে ধুঁকতে ধুঁকতে আসে বটে, কিন্তু পরনের ছেঁড়া পাতলুন নোংরা জামা পথে পথে ঘুরে বেড়িয়ে ফিরে যেতে হয় তাকে। এ শহর তার জায়গা নয়। একটা মস্ত শিউলি গাছে শরৎকালে অজস্র ফুল ফোটে বটে, কিন্তু সেই গাছটার তলায় ডাই হয়ে জমে থাকে আবর্জনা, ময়লা জল। গাছ ফুল ফোটায়, ফুল ঝরায়, কেউ ফিরেও তাকায় না। শুধু আমি লোভির মত চেয়ে থেকে ভাবি এক আঁজলা যদি পাওয়া যেত।
মাঝরাতে অন্ধকার এক জংশনে গাড়ি থেকে নামি। ঘোর অন্ধকার প্লাটফর্ম পেরিয়ে ওপাশে এক অন্ধকার ট্রেনের কামরায় উঠি; একা। ট্রেন ছাড়ে, দুলে দুলে চলে। কোথায় যাচ্ছি তা প্রশ্ন করতে নেই। কেউ জবাব দেবে না। কিন্তু জানিস বকুল, জানালায় তোর মুখ ভেসে ওঠে, করুন তীব্র এক স্বরে তুই বলিস “ পৃথিবী আর সুন্দর থাকবে না যে; ফুল ফুটবে না আর, ভোর আসবে না।” আমি একটু হাসবার চেষ্টা করি, বলি, বড় মারে এরা; বড্ড ভুল বোঝে। প্রত্যাখান করে। তার চেয়ে এই লম্বা ঘুমই ভালো। অনেক দিন ধরে আমি এইরকম ঘুমিয়ে পড়তে চাইছি।
style="display:block"
data-ad-client="ca-pub-2221917604703020"
data-ad-slot="5898435076"
data-ad-format="auto">
0 comments