হাওয়া বদলের চিঠি

নকশি কাঁথার মত বিচিত্র সুন্দর শৈশবের পৃথিবী কোথায় হারিয়ে গেছে। সেই সুন্দর গন্ধ গুলো আর পাই না। তেমন ভর আসে না। মায়ের গায়ের সুঘ্রানের জন্য মন আনচান করে। প্রিথিবী বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে ক্রমে। বুড়ো গাছের মত শুকিয়ে যাচ্ছে আমার ডালপালা। খসে যাচ্ছে পাতা। মহাকালের অন্তঃস্থলে তৈরী হচ্ছে একটা ঢেউ। একদিন সে এই পৃথিবীর তীরভূমি থেকে নিয়ে যাবে আমায়।
বুকের মধ্যে শৈশবের একটা কথা তীরের মত বিঁধে থরথর করে কাঁপছে আজও। সেই আমোঘ ঢেউটিকে যখনই প্রত্যক্ষ করি মনে মনে ওই কথাটি তখনই বুকের মধ্যে কেঁপে ওঠে। শৈশবের সব ঘ্রান, শব্দ আর স্পর্শ ফিরিয়ে আনে। মায়ের গায়ের ঘ্রাণ পেয়ে যেমন ছোটোবেলায় পাশ ফিরতাম, তেমনি আবার পৃথিবীর দিকে পাশ ফিরে শুই। মনে হয়, দেখা হবে। আবার আমাদের দেখা হবে। কোথা থেকে এসেছি, ফিরে যাবই বা কোথায়।
আমার পালে মৃত্যুর হাওয়া লেগেছে। তরতর করে ভাঁটিয়ে যাচ্ছে নৌকা। অথচ পৃথিবী কি গভীর। কত কোটি বছরের জীবন যাপনের চিহ্ন নিয়ে বয়ে যাচ্ছে। বাতাসে তার প্রাচীনতার ঘ্রাণ। সব প্রাচীন সময়, সব প্রাচীন বাতাস আজও রয়ে গেছে। এসব থেকেই জন্মেছি, এসবেই লয় পাবো। কোলে জারুলের ছায়া পড়ে, আলো দোলে। জলে চোখ ভেসে যায়, স্মৃতিভ্রংশের মত বসে থাকি। উৎকন্ঠায় অপেক্ষা করছি। আমরা দুজন উপত্যকা পেরিয়ে যাবো। ওদিকে একটা জমি, তারপর গাছ গাছালী। যাব, ফিরব কী? কে জানে? পৃথিবীতে কেউই খুবই জরুরী নয়। সে যতই জরুরী ভাবুক নিজেকে, প্রিয়জনকে। তবু দেখো, তাকে ছাড়াও চলে যায়।
কিছু অসুবিধে নেই। ছুটি দেবে? একবার দেখি হাওয়া পাল্টাতে পারি কিনা।
0 comments