তোর শ্রাবনে হারাবো ঠিকানা
কোনোদিন সুসময় দেখা দিলে দেখিস একদিন ঠিক ফিরে যাবো তোর মায়াবী চিলেকোঠায়।
জানিস, আমার খুব ইচ্ছে করে একবার দেখতে তোর যত্নে সাজানো ছোটোবেলার পুতুলগুলো, ওরা যে কতটা ভাগ্যবান ওরা জানেনা; আমি কিন্তু বুঝতে পারি।
তোর চিলেকোঠায় আর কি কি আছে আমায় দেখাবি?
শুনলাম তুই নাকি তোর সমস্ত স্থাবর অস্থাবর কষ্ট, মনখারাপ, বিষন্ন বিকেল আর একলা রাত আমার নামে লিখে দিয়েছিস।
তুই কি জানিস তোর দেওয়া কষ্টগুলো আজও জমিয়ে রেখেছি বুকপকেটে। ওরা কিন্তু তোর মত নয় একদমই। পিছু ছাড়তে চায়না মোটেই।
তুই কিন্তু অনেক কিছুই দিয়ে গেলি। বিষন্ন বিকেল, একলা আকাশ আর কিছু উদাস দুপুর। তোর দেওয়া দুপুরটাকে একবার উড়িয়েছিলাম অনেক অনেক উঁচুতে, তুই যতটা ভাবতে পারিস তার থেকেও বেশি। কিন্তু জানিস, ওই দুপুরটা লাট খেতে খেতে আবার ফিরে এলো আরও অনেক অনেক মনখারাপ নিয়ে; সেই থেকে ওকে জমিয়ে রেখেছি আমার লেখার টেবিলে। তুই বল, তোর দেওয়া কিছুই কি আমি ফেলতে পারি?
তোর বাড়ির সামনে যে নীল রঙের ডাকবাক্সটা দঁড়িয়ে থাকে ওকে একবার চিঠি লিখেছিলাম, সেই চিঠিতে ছিল আমার হাওয়া হয়ে যাওয়ার খবর।
আচ্ছা বলতে পারিস আমার আকাশটার রঙ বারবার পালটে যায় কেন? একসময় আমারও একটা আকাশ ছিল, ঠিক সমুদ্রের মতই নীল। সেই আকাশটাও কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেল। আচ্ছা আমায় বলতে পারিস তোর আকাশের রঙ কেমন? তোর আকাশে কি আজও বুনো হাঁসেরা পাখা মেলে উড়ে বেড়ায়?
প্রিয়তি, মাঝরাতে বৃষ্টিরা জানিয়ে দিয়ে গেলো বড্ড বেশি বড় হয়ে গেলাম বড় অবেলায়। সবাই যখন আদর খুঁজে বেড়ায় মাঝরাতে, আমি আজও খুঁজে বেড়াই আকাশের নীল রং; বুঝতে পারি দখিনা বাতাসের ইচ্ছে অন্য কিছুর; জানালার কাঁচে ঠান্ডা দু’টো হাত জানিয়ে দেয় আর ফেরা যাবে না ফিরতি পথ। ভালো থাকিস তুই নতুন চারা গাছ; এখনও আমি নদী খুঁজি রোজ, দেবদারু গাছেদের কানে কানে রোজ বলি এবার সময় এসেছে নির্বাসনের; একটু একটু করে ভাসান দিচ্ছি তোকে ঘোলা জলে। বৃষ্টির সামনে হাঁটু গেড়ে বসি, দু’হাত পেতে ভিখারির মত বলি “ ফিরিয়ে দে আমার নদী।”
তবুও কেউ জানবে না কখন চুপি চুপি আমি বেঁচে থাকি; এ বাঁচা অন্য রকমের বাঁচা। কখনও অনেক আকাশ যদি পাই , তোকে আনবো; তারপর রাতের আকাশ জুড়ে মা’য়ের ওমের মতই ফুটে উঠবে ভোরের গন্ধরাজ।
প্রিয়তি, একটা একটা করে নদী মুছে যায় রোজ; আবার কার্ণিশে এসে দাঁড়াই, হাতের মুঠি আলগা করে খুল সেই কোন এক সাঁঝবাতি ডুবু ডুবু ভোরে, বৃষ্টি মেখে ভেসে গেছিস কোন সে নদী বেয়ে। তারপর কত কত বৃষ্টিতে ভিজেছি, রোদ মেখেছি দু’হাতে; হিম হিম চাঁদের সাথে কথা বলেছি; এইরকম কিছু কিছু স্বচ্ছ সময় শুধু আমারই থেকে যায়।
অহংকার নেই, জেদ নেই, মান অভিমান নেই, রাগ নেই হিংসে নেই, তুই নেই; তবু কি অবহেলে বলি, আমার তো সবই আছে, কমতি পড়েনি কিছুর। একটা জানালা ছিল, শুধু আজ সেটাই নেই হয়ে গেছে।
এখনও আমি নদী খুঁজি রোজ; দেবদারু পাতাদের কানে কানে বলি, ফিরিয়ে দে আমার নদী। নদী খুঁজি রোজ আনমনে, শহরের পথে পথে, বিসর্জনের সময় এসেছে বোধে-অবোধে। পাঁজরের খাঁচার একটা একটা করে আগল উপড়ে নিচ্ছি রোজ। আর একটু করে তোকে ভাসান দিচ্ছি রোজ। তবুও কেউ জানবে না, এই সব মুহুর্তরা বড্ড বেশি নিঃসঙ্গ। জানিস প্রিয়তি, এইসব মুহুর্তে তোর কথা বড্ড বেশি মনে পড়ে; এইসব মুহুর্তগুলো বড় বেশি করে জানিয়ে দেয় আমি বড়ই একলা; কিন্তু তুই জানিস না, এই একলা থাকার মাঝেও এক আনন্দ আছে, সবার জন্যে তা নয়। তুই একে বলতে পারিস অহংকার, আমি বলি নিজেকে খুঁজে ফেরা; তুইতো জানিস অহংকার ব্যাপারটা আমার একদম আসে না। তারপরেও বলি আমার একটা আকাশ আছে, সে আকাশের রং আজও নীল; সেই আকাশে পরিযায়ি পাখিরা আজও উড়ে বেড়ায়। আক্ষেপ দিয়ে নতুন করে লিখতে চেয়েছি সেই ভুলে যাওয়া নামের বানান। প্রাণপণে ভুলে যেতে চেয়েছি সব। কিন্তু পেরেছি কি?
আসলে ভুলে যাওয়া নাম কখনোই ভুলতে পারা যায় না। এক অভিমানী বালকের মতো মন তাকেই খুঁজতে থাকে হারানো খেলনা ভেবে। তাই এই শহরের ভিড়ের মধ্যে, রাত্রিবেলা শূন্য পথে, আলোয়, ছায়ায় খুঁজে ফেরা তাকে। ভুলে যাওয়া নাম সংসারের ছায়ার মধ্যে মরে যায়। মরে যায় পাথর চাপা ঘাসের মতো। সত্যিই কি মরে? ভুলে যেতে চাইলেই কি ভুলে যাওয়া নাম বিদায় নেয় জীবন থেকে? না, বিদায় নেয় না। কোনো বৃষ্টি আসি আসি ভোরবেলা, কোনো এক ব্যস্ত দিনে অনেক রোদের মধ্যে, হেমন্তের মরে আসা বিকেলে ভুলে যাওয়া নাম ঝাঁপ দেয় ফিরে। উল্টে যায় পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পেছনের দিকে।
ভুলে যাওয়া নামের সঙ্গে আর কোনোদিন দেখা হয়নি। তবু নাম ধরে ডাকি, ডাকতে থাকি আড়াল থেকে। জানি, ভুলে ভরা একটা গল্পে নামটাও ভুল হয়, সংশোধনের সুযোগ থাকে না।
একবার পেছনে ফিরে দেখ, চাদরে নেমেছে কুয়াষা, মেঘেদের কাছে জমা রেখেছি অনেক অনেক ঘুম। তবুও তুই থাকিস আদরে আর নালিশে, তুই মিশে থাক ভেজা ভেজা শীতে, অচেনা নদীতে। আর হ্যাঁ, কখনো ফেরার ঠিকানা খুঁজিস না। বরফিলি ঘাসে মেঘ নেমে এলে, বৃষ্টি ভেজা বিকেলে আঙ্গুল ছুঁলে ঠিক দেখিস, তোর শ্রাবনে হারাবো ঠিকানা।।
style="display:block"
data-ad-client="ca-pub-2221917604703020"
data-ad-slot="3174276807"
data-ad-format="auto">
জানিস, আমার খুব ইচ্ছে করে একবার দেখতে তোর যত্নে সাজানো ছোটোবেলার পুতুলগুলো, ওরা যে কতটা ভাগ্যবান ওরা জানেনা; আমি কিন্তু বুঝতে পারি।
তোর চিলেকোঠায় আর কি কি আছে আমায় দেখাবি?
শুনলাম তুই নাকি তোর সমস্ত স্থাবর অস্থাবর কষ্ট, মনখারাপ, বিষন্ন বিকেল আর একলা রাত আমার নামে লিখে দিয়েছিস।
তুই কি জানিস তোর দেওয়া কষ্টগুলো আজও জমিয়ে রেখেছি বুকপকেটে। ওরা কিন্তু তোর মত নয় একদমই। পিছু ছাড়তে চায়না মোটেই।
তুই কিন্তু অনেক কিছুই দিয়ে গেলি। বিষন্ন বিকেল, একলা আকাশ আর কিছু উদাস দুপুর। তোর দেওয়া দুপুরটাকে একবার উড়িয়েছিলাম অনেক অনেক উঁচুতে, তুই যতটা ভাবতে পারিস তার থেকেও বেশি। কিন্তু জানিস, ওই দুপুরটা লাট খেতে খেতে আবার ফিরে এলো আরও অনেক অনেক মনখারাপ নিয়ে; সেই থেকে ওকে জমিয়ে রেখেছি আমার লেখার টেবিলে। তুই বল, তোর দেওয়া কিছুই কি আমি ফেলতে পারি?
তোর বাড়ির সামনে যে নীল রঙের ডাকবাক্সটা দঁড়িয়ে থাকে ওকে একবার চিঠি লিখেছিলাম, সেই চিঠিতে ছিল আমার হাওয়া হয়ে যাওয়ার খবর।
আচ্ছা বলতে পারিস আমার আকাশটার রঙ বারবার পালটে যায় কেন? একসময় আমারও একটা আকাশ ছিল, ঠিক সমুদ্রের মতই নীল। সেই আকাশটাও কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেল। আচ্ছা আমায় বলতে পারিস তোর আকাশের রঙ কেমন? তোর আকাশে কি আজও বুনো হাঁসেরা পাখা মেলে উড়ে বেড়ায়?
প্রিয়তি, মাঝরাতে বৃষ্টিরা জানিয়ে দিয়ে গেলো বড্ড বেশি বড় হয়ে গেলাম বড় অবেলায়। সবাই যখন আদর খুঁজে বেড়ায় মাঝরাতে, আমি আজও খুঁজে বেড়াই আকাশের নীল রং; বুঝতে পারি দখিনা বাতাসের ইচ্ছে অন্য কিছুর; জানালার কাঁচে ঠান্ডা দু’টো হাত জানিয়ে দেয় আর ফেরা যাবে না ফিরতি পথ। ভালো থাকিস তুই নতুন চারা গাছ; এখনও আমি নদী খুঁজি রোজ, দেবদারু গাছেদের কানে কানে রোজ বলি এবার সময় এসেছে নির্বাসনের; একটু একটু করে ভাসান দিচ্ছি তোকে ঘোলা জলে। বৃষ্টির সামনে হাঁটু গেড়ে বসি, দু’হাত পেতে ভিখারির মত বলি “ ফিরিয়ে দে আমার নদী।”
তবুও কেউ জানবে না কখন চুপি চুপি আমি বেঁচে থাকি; এ বাঁচা অন্য রকমের বাঁচা। কখনও অনেক আকাশ যদি পাই , তোকে আনবো; তারপর রাতের আকাশ জুড়ে মা’য়ের ওমের মতই ফুটে উঠবে ভোরের গন্ধরাজ।
প্রিয়তি, একটা একটা করে নদী মুছে যায় রোজ; আবার কার্ণিশে এসে দাঁড়াই, হাতের মুঠি আলগা করে খুল সেই কোন এক সাঁঝবাতি ডুবু ডুবু ভোরে, বৃষ্টি মেখে ভেসে গেছিস কোন সে নদী বেয়ে। তারপর কত কত বৃষ্টিতে ভিজেছি, রোদ মেখেছি দু’হাতে; হিম হিম চাঁদের সাথে কথা বলেছি; এইরকম কিছু কিছু স্বচ্ছ সময় শুধু আমারই থেকে যায়।
অহংকার নেই, জেদ নেই, মান অভিমান নেই, রাগ নেই হিংসে নেই, তুই নেই; তবু কি অবহেলে বলি, আমার তো সবই আছে, কমতি পড়েনি কিছুর। একটা জানালা ছিল, শুধু আজ সেটাই নেই হয়ে গেছে।
এখনও আমি নদী খুঁজি রোজ; দেবদারু পাতাদের কানে কানে বলি, ফিরিয়ে দে আমার নদী। নদী খুঁজি রোজ আনমনে, শহরের পথে পথে, বিসর্জনের সময় এসেছে বোধে-অবোধে। পাঁজরের খাঁচার একটা একটা করে আগল উপড়ে নিচ্ছি রোজ। আর একটু করে তোকে ভাসান দিচ্ছি রোজ। তবুও কেউ জানবে না, এই সব মুহুর্তরা বড্ড বেশি নিঃসঙ্গ। জানিস প্রিয়তি, এইসব মুহুর্তে তোর কথা বড্ড বেশি মনে পড়ে; এইসব মুহুর্তগুলো বড় বেশি করে জানিয়ে দেয় আমি বড়ই একলা; কিন্তু তুই জানিস না, এই একলা থাকার মাঝেও এক আনন্দ আছে, সবার জন্যে তা নয়। তুই একে বলতে পারিস অহংকার, আমি বলি নিজেকে খুঁজে ফেরা; তুইতো জানিস অহংকার ব্যাপারটা আমার একদম আসে না। তারপরেও বলি আমার একটা আকাশ আছে, সে আকাশের রং আজও নীল; সেই আকাশে পরিযায়ি পাখিরা আজও উড়ে বেড়ায়। আক্ষেপ দিয়ে নতুন করে লিখতে চেয়েছি সেই ভুলে যাওয়া নামের বানান। প্রাণপণে ভুলে যেতে চেয়েছি সব। কিন্তু পেরেছি কি?
আসলে ভুলে যাওয়া নাম কখনোই ভুলতে পারা যায় না। এক অভিমানী বালকের মতো মন তাকেই খুঁজতে থাকে হারানো খেলনা ভেবে। তাই এই শহরের ভিড়ের মধ্যে, রাত্রিবেলা শূন্য পথে, আলোয়, ছায়ায় খুঁজে ফেরা তাকে। ভুলে যাওয়া নাম সংসারের ছায়ার মধ্যে মরে যায়। মরে যায় পাথর চাপা ঘাসের মতো। সত্যিই কি মরে? ভুলে যেতে চাইলেই কি ভুলে যাওয়া নাম বিদায় নেয় জীবন থেকে? না, বিদায় নেয় না। কোনো বৃষ্টি আসি আসি ভোরবেলা, কোনো এক ব্যস্ত দিনে অনেক রোদের মধ্যে, হেমন্তের মরে আসা বিকেলে ভুলে যাওয়া নাম ঝাঁপ দেয় ফিরে। উল্টে যায় পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পেছনের দিকে।
ভুলে যাওয়া নামের সঙ্গে আর কোনোদিন দেখা হয়নি। তবু নাম ধরে ডাকি, ডাকতে থাকি আড়াল থেকে। জানি, ভুলে ভরা একটা গল্পে নামটাও ভুল হয়, সংশোধনের সুযোগ থাকে না।
একবার পেছনে ফিরে দেখ, চাদরে নেমেছে কুয়াষা, মেঘেদের কাছে জমা রেখেছি অনেক অনেক ঘুম। তবুও তুই থাকিস আদরে আর নালিশে, তুই মিশে থাক ভেজা ভেজা শীতে, অচেনা নদীতে। আর হ্যাঁ, কখনো ফেরার ঠিকানা খুঁজিস না। বরফিলি ঘাসে মেঘ নেমে এলে, বৃষ্টি ভেজা বিকেলে আঙ্গুল ছুঁলে ঠিক দেখিস, তোর শ্রাবনে হারাবো ঠিকানা।।
style="display:block"
data-ad-client="ca-pub-2221917604703020"
data-ad-slot="3174276807"
data-ad-format="auto">
0 comments