সারাজীবন, পথ হাঁটতে হাঁটতে তো অমনি অনেক পথের মুখে দাঁড়িয়েছি তীরসন্ধ্যায়- যেখানে দু'পথ গেছে দুইদিকে। কোন পথে যাব? কোন পথপ্রান্তে আছে আমার অমলধবল দুধসাদা বিছানা নিয়ে একখানা বাড়ি? পথের ক্লান্তি শেষে একটুখানি ঘুমাবো। শেষ পর্যন্ত একটি পথকে বেছে নিতে হয়েছে। কিন্তু মন তো গেছে সেই পথেও, যে পথ হয়নি বেছে নেয়া। না, জীবনের কিছু বেছে নেয়া পথই আমাকে শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত গন্তব্যে পেঁৗছে দেয়নি। কেননা, প্রতিটি সময়ই ভেবেছি, ওই ফেলে আসা পথটিও হয়তো আমাকে অন্যতর একটি গন্তব্যে নিয়ে যেত। তাই সর্বদা ভাবি এই মনে, তুই ফেলে এসেছিস কারে, মন, মনরে আমার।
ফেলে তো অনেককেই এসেছে। পথে পথে। কাবেরিকে, আদৃতাকে, লাকীকে। কাউকে হারিয়ে ফেলেছি পথে। হারিয়ে গেছে। যেন রে রে করে রক্তজবা চোখের কারা তাকে কেড়ে নিয়ে গেছে জোড়া দিঘির ঘাটে। এমনও তো ঘটেছে এ জীবনে। কিন্তু তারা সত্যই হারায়ে গেছে? না। তারা, সে সব না নেয়া, না পাওয়া, হারায়ে যাওয়া পথ আর মানুষ সকলই আছে, বেশি, করে আছে এই মনে। আমি তো তাদের বহন করে চলেছি জীবন্ত অথবা কবরসমেত।
আমার স্কুলবেলার সে দিনগুলো তো অখনেও স্পষ্ট মনে আছে। দুইবেণী দুলিয়ে, গোলাপিজামা পরে দুইবোন আসতো পাশের মির্তিঙ্গা চাবাগান হতে। কী নাম ছিল তাদের? জানা হয় নাই। তারা বসত একই সাথে। আমি মুগ্ধ বালক চেয়ে দেখি তাদের মুখপানে, পাঠের পড়া ভুলে। কাকে যে ভালো লাগে। তারপর তারা একদিন হঠাৎ হাওয়া হয়ে গেল।
সম্ভবত অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই কবি রোগে আক্রান্ত হই। আমার ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠতে থাকে কবিতা। আমার পড়ার বিষয় হয়ে উঠতে থাকে কলা বিষয়ক বিষয়গুলি। কিন্তু নবম শ্রেণিতে উঠার পরই শিক্ষকরা বললেন, যাদের রোল দশের মধ্যে তাদের সবাইকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হবে। ফলত আমার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াল গণিত, উচ্চতর গণিত। তার এলজেব্রাগুলো জেব্রার মত আমার চোখের সামনে ঘোরাফেরা করত তখন কেবলই মনে হত আহা, আমার বন্ধুরা না জানি কত আনন্দ নিয়া সাবলকি গল্পগুলান পড়তেছে! আর আমাকে শিখতে হচ্ছে গণিতের তো বটেই রসায়নের রসহীন সূত্র সমীকরণ। এই রসহীন রসায়ন, গণিত, পদার্থ নিয়া এসএসসি বৈতরণী ভালোভাবেই পাস করার পর শুরু হলো নতুন দ্বিধার ধাঁধা।
অনেক কিছুই ভুলে গেছি, হারিয়েছি তার থেকেও বেশি; হারিয়েছি ছেলেবেলার বৃষ্টি, হারিয়ে গেছে তেপান্তরের মাঠ, আজও বৃষ্টিরা একা একা পায়ে হেটে বাড়ি ফেরে; গতকাল নদী’টাও ফিরে গেছে তার কিশোরী বেলায়; আমি এখনও বসে আছি তোর ফেলে যাওয়া পথে।
ছোঁয়াছুঁয়ি-কানামাছি, কুমির ডাঙ্গা বিকেল। কত দিন হয়ে গেল, খেলি না। দূর থেকে ডাক আসে ঝিরঝির জলনদী মেঘেদের, আয় তুই, আজ ভিজে যাই দুজনেই। বৃষ্টিরা বড়বেশি আপন আমার। আর কারো সাথে তার ভাগ নেই। এইটুকু, এই সব ফোঁটা ফোঁটা জল-আদর শুধু থাক তোর আর আমারই। এই স্নিগ্ধ সকাল থেকে গাঢ় নীল সন্ধ্যেতে আলো মেখে, ভালো থাক।
প্রায়ই ভাবি কেউ চলে গেলে হয়ত কিছু একটা বদল হয়, আপন ইচ্ছায় জলাঞ্জলি দেয় ভিতরের সব না বলা কথা । সাজানো কুড়েঘরের সেই বধুয়া বারান্দায় এক চিলতে উল্লাসী টেউ নিরন্তর বয়ে চলে আঁচল ঢাকা মুখখানির হাটুজল স্মৃতি নিয়ে । কেউ চলে গেলে হয়ত কিছু একটা বদল হয়, আগের মত করে হাতছানি দিয়ে ডাকেনা আর আমাদের সেই পুরানো সুন্দরী সুখগুলো ।
তারপর একটা কেউটের মতো রাত্রি আসে।আমি অনেক পুরনো মুখ খুঁজি আজকাল, অথবা একটি নতুন মুখে প্রাচীন সুখ।বাসায় ফেরে আমার মধ্যে জেগে থাকা ‘মা’।মৃত্যুর কথা ভাবি,জীবনের কথা ভাবি,তারপর ভাবি এসব শ্যাওলা মাখা শরীর নিয়ে কতদিন পাল্লা দেবো? ভাবি কতদিন সিঁড়ির ঘরে লুকিয়ে রাখবো ভালোবাসার বোধগুলোকে,বলবো বৃষ্টি,চল একবার সস্তা পালিয়ে যাই।জামাকাপড় বিশেষ লাগবে না খালি কতগুলো বই যদি সঙ্গে নিতিস…। ভালবেসে কি পাবো?অভিযোগ?শরীর?আমি তো সেসব চাই নি কোনদিনও।একটা ছাদ-মানুষ,তারা,বোধ,চোখের জলে ভিজিয়ে দেওয়া ক্ষত,বোবা আদর।কাল রাতে জীবনানন্দ এসেছিলেন,বলছিলাম-আমি একটা কাগুজে বাঘ সেজে হেঁটে চলেছি শব্দের উপর দিয়ে মহাকালের পথে, বলছিলাম-আমার ঘুমের মধ্যে মরে যেতে ভয় লাগে,একা।
ফেলে তো অনেককেই এসেছে। পথে পথে। কাবেরিকে, আদৃতাকে, লাকীকে। কাউকে হারিয়ে ফেলেছি পথে। হারিয়ে গেছে। যেন রে রে করে রক্তজবা চোখের কারা তাকে কেড়ে নিয়ে গেছে জোড়া দিঘির ঘাটে। এমনও তো ঘটেছে এ জীবনে। কিন্তু তারা সত্যই হারায়ে গেছে? না। তারা, সে সব না নেয়া, না পাওয়া, হারায়ে যাওয়া পথ আর মানুষ সকলই আছে, বেশি, করে আছে এই মনে। আমি তো তাদের বহন করে চলেছি জীবন্ত অথবা কবরসমেত।
আমার স্কুলবেলার সে দিনগুলো তো অখনেও স্পষ্ট মনে আছে। দুইবেণী দুলিয়ে, গোলাপিজামা পরে দুইবোন আসতো পাশের মির্তিঙ্গা চাবাগান হতে। কী নাম ছিল তাদের? জানা হয় নাই। তারা বসত একই সাথে। আমি মুগ্ধ বালক চেয়ে দেখি তাদের মুখপানে, পাঠের পড়া ভুলে। কাকে যে ভালো লাগে। তারপর তারা একদিন হঠাৎ হাওয়া হয়ে গেল।
সম্ভবত অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই কবি রোগে আক্রান্ত হই। আমার ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠতে থাকে কবিতা। আমার পড়ার বিষয় হয়ে উঠতে থাকে কলা বিষয়ক বিষয়গুলি। কিন্তু নবম শ্রেণিতে উঠার পরই শিক্ষকরা বললেন, যাদের রোল দশের মধ্যে তাদের সবাইকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হবে। ফলত আমার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াল গণিত, উচ্চতর গণিত। তার এলজেব্রাগুলো জেব্রার মত আমার চোখের সামনে ঘোরাফেরা করত তখন কেবলই মনে হত আহা, আমার বন্ধুরা না জানি কত আনন্দ নিয়া সাবলকি গল্পগুলান পড়তেছে! আর আমাকে শিখতে হচ্ছে গণিতের তো বটেই রসায়নের রসহীন সূত্র সমীকরণ। এই রসহীন রসায়ন, গণিত, পদার্থ নিয়া এসএসসি বৈতরণী ভালোভাবেই পাস করার পর শুরু হলো নতুন দ্বিধার ধাঁধা।
অনেক কিছুই ভুলে গেছি, হারিয়েছি তার থেকেও বেশি; হারিয়েছি ছেলেবেলার বৃষ্টি, হারিয়ে গেছে তেপান্তরের মাঠ, আজও বৃষ্টিরা একা একা পায়ে হেটে বাড়ি ফেরে; গতকাল নদী’টাও ফিরে গেছে তার কিশোরী বেলায়; আমি এখনও বসে আছি তোর ফেলে যাওয়া পথে।
ছোঁয়াছুঁয়ি-কানামাছি, কুমির ডাঙ্গা বিকেল। কত দিন হয়ে গেল, খেলি না। দূর থেকে ডাক আসে ঝিরঝির জলনদী মেঘেদের, আয় তুই, আজ ভিজে যাই দুজনেই। বৃষ্টিরা বড়বেশি আপন আমার। আর কারো সাথে তার ভাগ নেই। এইটুকু, এই সব ফোঁটা ফোঁটা জল-আদর শুধু থাক তোর আর আমারই। এই স্নিগ্ধ সকাল থেকে গাঢ় নীল সন্ধ্যেতে আলো মেখে, ভালো থাক।
প্রায়ই ভাবি কেউ চলে গেলে হয়ত কিছু একটা বদল হয়, আপন ইচ্ছায় জলাঞ্জলি দেয় ভিতরের সব না বলা কথা । সাজানো কুড়েঘরের সেই বধুয়া বারান্দায় এক চিলতে উল্লাসী টেউ নিরন্তর বয়ে চলে আঁচল ঢাকা মুখখানির হাটুজল স্মৃতি নিয়ে । কেউ চলে গেলে হয়ত কিছু একটা বদল হয়, আগের মত করে হাতছানি দিয়ে ডাকেনা আর আমাদের সেই পুরানো সুন্দরী সুখগুলো ।
তারপর একটা কেউটের মতো রাত্রি আসে।আমি অনেক পুরনো মুখ খুঁজি আজকাল, অথবা একটি নতুন মুখে প্রাচীন সুখ।বাসায় ফেরে আমার মধ্যে জেগে থাকা ‘মা’।মৃত্যুর কথা ভাবি,জীবনের কথা ভাবি,তারপর ভাবি এসব শ্যাওলা মাখা শরীর নিয়ে কতদিন পাল্লা দেবো? ভাবি কতদিন সিঁড়ির ঘরে লুকিয়ে রাখবো ভালোবাসার বোধগুলোকে,বলবো বৃষ্টি,চল একবার সস্তা পালিয়ে যাই।জামাকাপড় বিশেষ লাগবে না খালি কতগুলো বই যদি সঙ্গে নিতিস…। ভালবেসে কি পাবো?অভিযোগ?শরীর?আমি তো সেসব চাই নি কোনদিনও।একটা ছাদ-মানুষ,তারা,বোধ,চোখের জলে ভিজিয়ে দেওয়া ক্ষত,বোবা আদর।কাল রাতে জীবনানন্দ এসেছিলেন,বলছিলাম-আমি একটা কাগুজে বাঘ সেজে হেঁটে চলেছি শব্দের উপর দিয়ে মহাকালের পথে, বলছিলাম-আমার ঘুমের মধ্যে মরে যেতে ভয় লাগে,একা।