বিষন্নতা, তুমি আজ আর আমাকে ঘিরে থেকো না। জেনো, আমি একডজন মোমবাতি কিনে এনে নতুন জীবন শুরু করে দেব আগামী সপ্তাহে। স্নিগ্ধ তুমি এখনও কি কাক ডাকা ভোরে ধোঁয়া ওঠা কফির মগে আমার জন্য উষ্ণতা ছড়াও? খুব জানতে ইচ্ছে করে, আমার কবিতারা এখনও কি আলশেমিতে ভরা দুপুরে তোমার মনের জানালায় উঁকি দেয়।
মেলা থেকে ফেরা পথে কোনএকদিন আমি নিশ্চিত দেখেছি বিপরীত মুখি মনহারা এক একলা মানুষ, সপ্তম দিগন্ত পার হয়ে যেন সে চলেছে অষ্টম দিগন্তের দিকে। আমি কতদূরে যাব কিছুই জানি না।
আর কেউ দেখুক বাঁ না দেখুক, আমি ঠিক টের পাই, অভিমান আমার ওষ্ঠে এনে দেয় মৃদু হাঁসি, আমি এমন ভাবে পা ফেলি যেন মাটির বুকেও আঘাত না লাগে। আমার তো কারুকে দুঃখ দেওয়ার কথা নয়।
পুরোনো বাড়ির অন্ধকার ঘরে শূন্যতার মধ্যেও এক বিশাল হাঁ-করা শূন্যতা চেয়ে থাকে, আকাশ মিলিয়ে যায়, জোয়ারে ভেসে যায় বন্ধুত্ব, আয়ু।এরই মধ্যে এক দমকা হাওয়া এসে সান্ধ্য ভাষায় প্রশ্ন করে, মনে আছে?
তখনই ছটপটিয়ে ওঠে বুক, সমস্ত বিচ্ছেদের দুঃখ মনে পড়ে যায়। এদিক ওদিক তাকাই। আমার দিক মেলে না,কুল মেলে না। খরচ হল এক আধুলি খাতায় লেখা রাজ্যের দেনা। একটা মাত্র জীবন, তার হাজার রকম দুনিয়াদারি।
আজ বহুদুর এসে, কংক্রিট ছাদের নীচে, সামনে খোলা কবিতার খাতা, আমি সেই কিশোরকে দেখি, বসে আছে নদীর ঢালুতে। আমি দেখি নদীটির পাশ ফেরা, বাতাস দ্বিখন্ড করে ডেকে ওঠে চিল। একটু একটু মন খারাপ, কবিতার খাতা মুড়ে উঠে আসি বারান্দায়। আকাশ অচেনা লাগে, মায়াময় গাঢ় চোখে মনে হয় দিগন্তও খুব কাছে এগিয়ে এসেছে। কি সুন্দর আবছায়া নদীটি। চারিদিকে আধো আলো, আধো অন্ধকার। নদীটি বয়ে যায় অবিরল। স্মৃতি বিস্মৃতিময় তার স্রোত। ক্লান্তি আসে না। বকুলের গাছ থেকে পাতা খসে পড়ে, কখনও ফুল, বৃষ্টি আসে, ঝড় বয়ে যায়। আবার দেখা দেয় রোদ। তবু আবছায়া নদীটি বয়ে যায়,বয়ে যায়।
দূর গঙ্গায় বেজে ওঠে জাহাজের ভোঁ। মাথার উপরে উড়োজাহাজের বিষন্ন শব্দ। দুঃশীল রত্নাকর বসে আছেন গাছতলায়। পথিকের অপেক্ষায়। এ পথে আর কোনও পথিক আসে না। সম্ভবত ঈশ্বর তাদের নিরাপদ ঘুরপথ চিনিয়ে দিয়েছেন। তবু অপেক্ষায় বেলা যায়। জীর্ন হয়ে আসে ঘরদুয়ার, বয়স বাড়ে, ক্ষুধা বাড়ে। রত্নাকর বসে থাকে গাছতলায়, পথিকের অপেক্ষায়। বহুকাল কেটে যায়। অভ্যাসবশত রত্নাকর বসে আছে , পাশে রাখা বশংবদ খাড়া। হঠাৎ দূরে শোনা গেল পথিকের গান। রত্নাকর খর্গ তুলে নেয় শুন্যে, দৌড়ে যায়, তারপর ঢলে পড়ে। ভয়ংকর ভারী খর্গ তাঁকে টেনে রাখে। ঝাপসা চোখে রত্নাকর চেয়ে দেখে অদুরে পথিক, তরুন, ঐশ্চর্য্যবান। রত্নাকর কেঁদে ওঠে। পথিক সামনে এসে দাঁড়ায়, কি চাও রত্নাকর?
রত্নাকর হাত জোড় করে বলে, "আমার পরিবার উপোস করে আছে, দয়াময়, দয়া করো। ভগবান তোমার মঙ্গল করবেন।"
মাঝে মাঝে তাঁকে ডাক দিই, 'রত্নাকর, ওহে রত্নাকর।' বুড়ো ভিখিরিটা জানালার কাছে চলে আসে, আমি তাঁকে একটা দুটো পয়সা দিই। জিজ্ঞেস করি, 'কখনও কি ডাকাত ছিলে?' সে মাথা নাড়ে। হাসে। চলে যায়।
দেখি ভাঙ্গা ছেঁড়া অবান্তর সব দৃশ্য ভেসে যায়। কিছুতেই মেলানো যায় না। কখনও দেখি একটা বল গড়িয়ে যাচ্ছে ঘাসের উপর। খেলুড়ির দেখা নেই। তবু বল গড়িয়ে যাচ্ছে। একা, সাদা,রৌদ্রের ভেতর। কখনও দেখি প্রকান্ড ভাঙ্গা একটা মসজিদবাড়ি। আগাছায় ভরা, পরিত্যাক্ত, দেউলিয়া। তবু পড়ন্ত বেলায় তার উঠোনে কে একজন নীরবে নামাজ পড়ছে। দেখি আল্লা বুড়ো দরজি। আল্লার বুকের ভেতর হঠাৎ জেগে উঠেছে ধান ভাঙার তোলপাড় শব্দ। ফসলের মত উঠে আসছে ভালোবাসা। আল্লা বুড়ো দরজি আনমনে চেয়ে আছে। কিছুই মেলানো যায় না। কিছুতেই মেলানো যায় না। তবু চেয়ে দেখি আমার ছেলেবেলার হারানো বল তার কোলের কাছে পরে আছে।
একদিন সুসময়ে তিনি সব ফিরিয়ে দেবেন।।
মেলা থেকে ফেরা পথে কোনএকদিন আমি নিশ্চিত দেখেছি বিপরীত মুখি মনহারা এক একলা মানুষ, সপ্তম দিগন্ত পার হয়ে যেন সে চলেছে অষ্টম দিগন্তের দিকে। আমি কতদূরে যাব কিছুই জানি না।
আর কেউ দেখুক বাঁ না দেখুক, আমি ঠিক টের পাই, অভিমান আমার ওষ্ঠে এনে দেয় মৃদু হাঁসি, আমি এমন ভাবে পা ফেলি যেন মাটির বুকেও আঘাত না লাগে। আমার তো কারুকে দুঃখ দেওয়ার কথা নয়।
পুরোনো বাড়ির অন্ধকার ঘরে শূন্যতার মধ্যেও এক বিশাল হাঁ-করা শূন্যতা চেয়ে থাকে, আকাশ মিলিয়ে যায়, জোয়ারে ভেসে যায় বন্ধুত্ব, আয়ু।এরই মধ্যে এক দমকা হাওয়া এসে সান্ধ্য ভাষায় প্রশ্ন করে, মনে আছে?
তখনই ছটপটিয়ে ওঠে বুক, সমস্ত বিচ্ছেদের দুঃখ মনে পড়ে যায়। এদিক ওদিক তাকাই। আমার দিক মেলে না,কুল মেলে না। খরচ হল এক আধুলি খাতায় লেখা রাজ্যের দেনা। একটা মাত্র জীবন, তার হাজার রকম দুনিয়াদারি।
আজ বহুদুর এসে, কংক্রিট ছাদের নীচে, সামনে খোলা কবিতার খাতা, আমি সেই কিশোরকে দেখি, বসে আছে নদীর ঢালুতে। আমি দেখি নদীটির পাশ ফেরা, বাতাস দ্বিখন্ড করে ডেকে ওঠে চিল। একটু একটু মন খারাপ, কবিতার খাতা মুড়ে উঠে আসি বারান্দায়। আকাশ অচেনা লাগে, মায়াময় গাঢ় চোখে মনে হয় দিগন্তও খুব কাছে এগিয়ে এসেছে। কি সুন্দর আবছায়া নদীটি। চারিদিকে আধো আলো, আধো অন্ধকার। নদীটি বয়ে যায় অবিরল। স্মৃতি বিস্মৃতিময় তার স্রোত। ক্লান্তি আসে না। বকুলের গাছ থেকে পাতা খসে পড়ে, কখনও ফুল, বৃষ্টি আসে, ঝড় বয়ে যায়। আবার দেখা দেয় রোদ। তবু আবছায়া নদীটি বয়ে যায়,বয়ে যায়।
দূর গঙ্গায় বেজে ওঠে জাহাজের ভোঁ। মাথার উপরে উড়োজাহাজের বিষন্ন শব্দ। দুঃশীল রত্নাকর বসে আছেন গাছতলায়। পথিকের অপেক্ষায়। এ পথে আর কোনও পথিক আসে না। সম্ভবত ঈশ্বর তাদের নিরাপদ ঘুরপথ চিনিয়ে দিয়েছেন। তবু অপেক্ষায় বেলা যায়। জীর্ন হয়ে আসে ঘরদুয়ার, বয়স বাড়ে, ক্ষুধা বাড়ে। রত্নাকর বসে থাকে গাছতলায়, পথিকের অপেক্ষায়। বহুকাল কেটে যায়। অভ্যাসবশত রত্নাকর বসে আছে , পাশে রাখা বশংবদ খাড়া। হঠাৎ দূরে শোনা গেল পথিকের গান। রত্নাকর খর্গ তুলে নেয় শুন্যে, দৌড়ে যায়, তারপর ঢলে পড়ে। ভয়ংকর ভারী খর্গ তাঁকে টেনে রাখে। ঝাপসা চোখে রত্নাকর চেয়ে দেখে অদুরে পথিক, তরুন, ঐশ্চর্য্যবান। রত্নাকর কেঁদে ওঠে। পথিক সামনে এসে দাঁড়ায়, কি চাও রত্নাকর?
রত্নাকর হাত জোড় করে বলে, "আমার পরিবার উপোস করে আছে, দয়াময়, দয়া করো। ভগবান তোমার মঙ্গল করবেন।"
মাঝে মাঝে তাঁকে ডাক দিই, 'রত্নাকর, ওহে রত্নাকর।' বুড়ো ভিখিরিটা জানালার কাছে চলে আসে, আমি তাঁকে একটা দুটো পয়সা দিই। জিজ্ঞেস করি, 'কখনও কি ডাকাত ছিলে?' সে মাথা নাড়ে। হাসে। চলে যায়।
দেখি ভাঙ্গা ছেঁড়া অবান্তর সব দৃশ্য ভেসে যায়। কিছুতেই মেলানো যায় না। কখনও দেখি একটা বল গড়িয়ে যাচ্ছে ঘাসের উপর। খেলুড়ির দেখা নেই। তবু বল গড়িয়ে যাচ্ছে। একা, সাদা,রৌদ্রের ভেতর। কখনও দেখি প্রকান্ড ভাঙ্গা একটা মসজিদবাড়ি। আগাছায় ভরা, পরিত্যাক্ত, দেউলিয়া। তবু পড়ন্ত বেলায় তার উঠোনে কে একজন নীরবে নামাজ পড়ছে। দেখি আল্লা বুড়ো দরজি। আল্লার বুকের ভেতর হঠাৎ জেগে উঠেছে ধান ভাঙার তোলপাড় শব্দ। ফসলের মত উঠে আসছে ভালোবাসা। আল্লা বুড়ো দরজি আনমনে চেয়ে আছে। কিছুই মেলানো যায় না। কিছুতেই মেলানো যায় না। তবু চেয়ে দেখি আমার ছেলেবেলার হারানো বল তার কোলের কাছে পরে আছে।
একদিন সুসময়ে তিনি সব ফিরিয়ে দেবেন।।
0 comments