নির্জনতা থেকে পাঠ

by - 10:59:00 PM

ছায়াপথ পেরিয়ে গ্রহ নক্ষত্র পেরিয়ে পৃথিবীতে এসে থমকে দাঁড়ালো আলো— একটি সবুজ পাতা ফ্রক বদলাচ্ছে।বিচ্ছিন্নতা কখনই দ্বীপের মত হতে পারে না। দ্বীপের চারপাশে জল থাকে...সেখানে নৌকো ভাসানোর স্বপ্ন থাকে। হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে, পেরিয়ে যাওয়ার বিশ্বাস থাকে...
জানিস প্রিয়তি, ধীরে ধীরে আমার নদীটার জল কালো হয়ে যাচ্ছে। তবুও তুই যখন নদীটার পাশে এসে দাঁড়াস, তোর চোখটা আগের থেকেও বেশি নীল লাগে।

জানিস প্রিয়তি, সবুজ পাতারা কাঁদলে বোঝা যায়না, বোঝা যায় যখন ঝরাপাতারা ভিজে থাকে। আমার পাতাগুলো ধীরে ধীরে ঝরে গেছে। প্রিয়তি, তুই কল্পতরু নোস, তবুও সবাই তোর কাছে চায়, সে রুটি হোক বা শরীর। তোকে আমি একটা উদ্ভিদ বলেই ভাবি। তোরও আলো চাই, জল চাই, দাঁড়িয়ে থাকার জন্য একটু মাটি চাই...
ঠিকানার সাথে আড়ি করে মেঠো পথে আমাদের হাতে ধরা দেয়নি চাঁদ। প্রিয়তি, আমাদের আজও পথভোলা পথিক হওয়া হলোনা।
মাঠের ধারে মেহগিনি গাছটা অনেকটা বড় হয়ে গেছে। চোখেই পড়েনি, ওর মাথাটা আজ আর হাত দিয়ে ছোঁয়া যায়না। গোলপোস্ট গুলো আজও একই জায়গায় রয়েছে, শুধু পোস্টের জালগুলো আজ ছেঁড়া।



আমার মনে পড়ে – আমি যখন বিশের কোঠায়,তখন গ্রীষ্মের শেষের পুরনো চাঁদ, কানের দুলে
পাথরের রূপ নিয়েছে , বাতাস এল চাঁদের থেকেআর সহসা আক্রান্ত হল বৃক্ষরাজি,এবং একটি পাতা ঘুরতে ঘুরতে ঝরার সময়ে পথ খুঁজলো। লণ্ঠনের মৃদু আলোর মধ্য দিয়ে বহুদূরের গাঢ় কৃষ্ণ নিসর্গ-জোর করে প্রবেশ করলো সিদ্ধান্তহীন শহরের ভিতর।
নিরুদ্দেশ হয়ো না… মুহূর্তেই নিরুদ্দেশ হতে পারো তাহলে শতক শতক পেরিয়ে আমাদের দেখা হবে কেমন করে? তোমার দ্বৈত কারো কি পৃথিবীতে থাকা সম্ভব কিংবা আমার সত্তার? আমি বৈকাল হ্রদের গভীরে ডুবে গিয়ে অন্য কোথাও ফোঁস করে ভেসে উঠতে চাই, মিসিসিপিতে নয় কেন,আমার দারুণ ভালোবাসার এই মহাবিশ্বে আমি নিঃসঙ্গ আগাছা হয়ে থাকতে চাই।




দুই তিন অথবা আরও বেশি দিন ধরে যারা বসে আছে পৃথিবীর তাপে তাপে,
ট্রেনে ঝাকুনির গতিময় দূরে - শেষরাতে বৃষ্টির অপেক্ষায় ; যারা জেনেছে ,
ঝড়-বৃষ্টি কিম্বা সে সব প্লাবনের গল্প -- নূহের নৌকা -- জোড়ায় জোড়ায় প্রাণীসকল -- প্লাবন প্লাবন ;
প্লাবনের শেষে ছড়িয়ে ছিটিয়ে জগতময় সিঁড়িপথে মাকড়সার জালে পতঙ্গের আজন্ম আতঙ্কে...

এমন এক মাকড়সার জালের ছবি আঁকতে আঁকতে আমার সমস্ত আষাঢ়ের দুপুর।

জানিস, এখন আমার একমাত্র সঙ্গী নৈ:শব্দ, আমার সাথে কথা বলে, কষ্ট পেলে আমাকে ভোলায়, বলে এবার তাহলে "একলা একলা পথ চলা"। আমি তো কোনদিন বন্ধুত্বের দাবী রাখিনি,
শুধু রাত্রির কাছে চেয়েছিলাম - একটা সুন্দর ঘুম আর পরিযায়ী পাখিদের কাছে একটা রঙীন স্বপ্ন; তবু কেন উচ্ছাসের নদী শুধু একটানা বয়ে যায় দু-পাড়ের ছায়াছবি স্থির-নির্বাক হয়ে যায় ?
 আর আমি, এখনও ঘড়ির কাঁটার লেজ ধরে প্রাণহীন চর হয়ে পড়ে আছি তার অপেক্ষায়। বুঝলাম হারিয়ে যাওয়া কোন কিছুই ফিরে আসে না, শরীরের নিঃশ্বাসের মতো হারিয়ে যায় চিরতরে। আজ আমার কোন কিছুর জন্য অপেক্ষা নেই, সবই সয়, উচ্ছাসে ভরা প্রানোজ্জল তোমার লেখাগুলোর জন্যেও নয় । কে জানে বিকেলের কাছে ঝলসে যাওয়া দুপুরের কান্না তোমার ছোঁয়ায় কাগুজে নৌকায় ভেসে আসবে কিনা আমার কাছে ...




শুয়ে শুয়ে তাই ভাবি - সময় মানেই এগিয়ে চলা, পাহাড় যেমন মিশে যায় নীলে দুই বাহু প্রসারিত করে,
দুর্গম খাদ বেয়ে যেমন গড়িয়ে নামে উন্মত্ত ঝর্না রূপের অঝোর ধারায় আমার সবকিছু তছনচ করে;
জানিস পাগলী, সেই ঝর্ণার বুকের মাঝে আছে একটা কষ্ট জমা পাথর, সময়ের সাথে একদিন রাশি রাশি বালিকণা হয়ে ভেঙে পড়বে তোর চোখের কোনে, তখন নাহয় ফেলে দিস ঠিকানা না রেখে ।
আজ শহরের নির্জন রাস্তায় হাঁটছে আমার সব ভুল মনের অন্তর্বাস ছুঁয়ে আছে জমে থাকা যত জল,
প্রতিটি অঙ্গে আজ শুধু অপেক্ষা -- দূরের বিলাসী, হে মহিয়সী, আমি যে তার সুদুরের পিয়াসী।
জানি সব শেষ হয়ে গেছে অথবা হয়নি শুরু কিছু, জীবনের নিরর্থকতা প্রেমহীন থেকে অর্থবহ হয় শুধু; তবু তহবিলে গচ্ছিত রাখি সব স্মৃতি, বিদগ্ধ জোনাক --কালো রাত শেষ, আবার শুরু হবে নতুন প্রেমের সকাল ।




You May Also Like

0 comments