স্বপ্ন, তুমি এসেছিলে কি?
“আমাকে একটি কথা দাও, যা আকাশের মত সহজ মহৎ বিশাল, গভীর;
মলিন ইতিহাসের অন্তর ধুয়ে চেনা হাতের মতন,
আমি যাকে আবহমান কাল ধরে ভালোবেসে এসেছি সেই নারীর।
সেই রাত্রির নক্ষত্রালোকিত নিবিড় বাতাসের মতো।”
এই ক্ষনস্থায়ী জীবনের অনুভুতি কতই না বিচিত্র। মলিন কবিতাগুলো রঙ্গিন করে দেবো, কতজন কত কথা দিল, অথচ দিনের শেষে সবার উপর বোষ্টুমি অথবা বরুনা নয়তো নদের আলির প্রেতাত্মা ভর করলো। তুমি কি জানো কেন বৃষ্টি নামে প্রতিরাতে? তুমি বললে ভূগোল আমার বিষয় নয়। ভ্রু কুঁচকিয়ে তাকালে দূরে , আর তখনই বৃষ্টি নামলো আমার শহরে।
স্বপ্নডানায় ভর করে উড়ে চলা এ জীবন, তবুও সকলের অগোচরে কোনো এক অজানা পিছুটানে থেমে যেতে মন চায়; জানো বকুল একদিন ঠিক হেঁটে যাবো সেই রাঙ্গামাটির পথে খালিপায়ে; তোমার আঁকড়ে ধরা হাতে রাখবো হাত, তারপর সেই তেপান্তরের মাঠে সবুজ গাছের গালিচায় শুয়ে থাকা পাশাপাশি, আর আকাশের ক্যানভাসে উড়ে যাওয়া ধবল বক দেখে উল্লাসিত তোমার সেই ডাক ‘পাগল’। এমন একটা শ্বাস আর ডাকের জন্য জীবনটা বড্ড বেশি বোহেমিয়ান হয়ে গেলো।
জানিস বকুল,
গ্রীষ্মের দুপুরে ক্লান্ত পথিকের মত যখন
অনামিকার দ্বারে এসে এক গ্লাস জল চেয়েছিলাম তখন
ঝড়ের কবলে পড়া নৌকার মাঝির মত অনামিকা
মাটির গ্লাসে করে জল এনে দিয়েছিলে,
সাথে দিয়েছিলে উওপবাস ভাঙা দুটো বাতাসা।
অচেনে পথে চলতে চলতে তখন নিজের কাছেই অচেনা,
তবুও অনামিকা আমার বহুদিনের চেনা পরিচিত।
চেনে স্বর নিয়ে যখন সে জিজ্ঞেস করেছিল
‘পথিক তোমার বাড়ি কোথায়? যাচ্ছো কোথায় ?’
আমি উত্তর দিতে পারিনি;
আমি তাকে বলতে পারিনি
পথিকের বাড়ি হয় না, গন্তব্য হয়না;
উত্তরে শুধু বলেছিলাম ‘জানিনা।‘
দিগন্ত খোঁজা চোখ নিয়ে হতবাক হয়ে চেয়েছিল অনামিকা। তারপর
চোখ নামি
য়ে বলেছিল “ দু’মুঠো চিড়ে আর জিল দিলেম, পথে খেয়ে নিও।”
দু’পা এগোতে পিছু ডেকে বলেছিল “ফেরার পথে পারলে আবার এসো।”
আরপর বহুদিন হয়ে গেছে...
অনামিকা হয়তো এতোদিনে বুঝেগেছে
পথিকের কোনো বাড়ি হয়না, পিছুটান হয় না, গন্তব্য হয়না, আর
ফিরে আসা বলে কিছু হয় না।।
জানিস বকুল, এক এক দিনের রং এক এক রকম; এক এক দিনের ঘ্রান এক একরকম; এক একদিনের স্পর্শ এক একরকম; জীবন যদি হয় নানা রকম দিনের মেলা, তবে তার থেকে আমি বাদ দেব সমস্ত ছাই রঙা ফুল। শুভ্রতার দিগন্ত মাড়িয়ে একদিন তুমি এসো আমার ছোট ঘরে; আমার আছে জল, আমার আছে ছায়া আর আমার চোখে আছে প্রতীক্ষা। একদিন ভুল করেই না হয় এসে দেখে যেও কেউ একজন দিনরাতকে তুচ্ছ করে বেঁচে থাকে শুধুই অকারনে।
তবুও নিরবতার খুব কাছে গিয়ে প্রশ্ন করি, ভিতরে এত তোলপাড় কিসের তোমার? কখনও ভালোবেসেছিলে কাউকে? অথবা বিষাদ হয়ে জানালা ঘেঁসে দাঁড়িয়েছিল কেউ? তুমি যাকে আকাশ ভেবে দিগন্তরেখায় মিশিয়েছিলে সেটা আসলে পাহাড় ছিল। জানো বকুল, আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় তোমায় এক পাহাড়ের গল্প বলি; এক অদ্ভুত নির্বাসিত পাহাড় আর এক একলা গাছের গল্প। আমার খুব ইচ্ছে করে ওই পাহাড়টাকে জিজ্ঞেস করি ওর এই নির্বাসন কিসের! ওর কি ইচ্ছে করে না সেই গাছটির কাছে ফিরে যেতে? আজ আবার স্বপ্নে দেখলাম সেই অদ্ভুত নিঃসঙ্গ পাহাড় ধীরে ধীরে সূর্যাস্তের শেষ রক্তিম আভাটুকু শুষে নিচ্ছে। আজও স্বপ্নের সন্ধানে বেরোবেন ঈশ্বর; মাঝরাতে তারার গুঁড়োর মত ঝরে পড়ে লাল নীল স্বপ্নেরা, একমুঠো স্বপ্ন কুড়িয়ে নিয়ে বুকপকেটে ভরে নিই; তারপর ফিরে যাই পাহাড়ের কাছে, বলি “ হে মহান পাহাড়, এবার তোমার নির্বাসন জীবনের শেষ হোক, তুমি ফিরে যাও তোমার ওই একলা গাছের কাছে, আর হ্যাঁ, কোনোদিন আর আমার স্বপ্নে এসো না।”
জানিস বকুল, আমাদের স্বপ্নগুলো কষ্টগুলো ঠিক আমাদের মতই অদ্ভুত। কত ছোটো ছোটো করনেই আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়, আবার কিছু কষ্টগুলোকে ইচ্ছে করেই মনের এককোনে রেখেদিই খুব যত্ন করে। আমার অনেক দিনের ইচ্ছে একটা নদী কেনার, নদীর নামটাও ঠিক করে রেখেছি- ময়ুরাক্ষী; সেই নদী আমার আজো কেনা হয় নি। আজ মাথার চুলো দু’একটা রুপোলী ঝিলিক দেখলাম, বুঝতে পারছি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি, সেই ময়ুরাক্ষী নদী আমার কোনোদিন কেনা হবে না। এমন দু’একটা ইচ্ছে পূরন না হওয়াই ভালো।
জ্বরের দুপুরে চোখে নেমে এলো এক অদ্ভুত স্বপ্ন, ভয়ার্ত ভয়ংকর!
একটা পাতলা চাদর গায়ে ল্যাপটপের পাশে বালিশ পেতে
ঘুমিয়ে ছিল আমার ভাবনা,
কিন্তু বড় অশান্ত ছটফটে লাল চোখে ভেবে চলেছিল এক গল্পের পট;
হঠাৎ সেক্ষনে অনধিকার প্রবেশ জটিলতার, আর তারপরেই
ভারী বাতাসে বয়ে চলা কিছু আপত্তিকর জলছবির ঝলক।
আমার কুঁকড়ে থাকা মন আবার চমকে ওঠে,
মায়ের গলা শুনি “কখন এলি?”
সিড়ির উপরের চিলেকোঠার ঘরে মৃত মানুষের প্রতিবিম্ব
নাড়িয়ে দেয় আমার সিক্সথ সেন্স কে।
ধড়ফড় করা ধমণী নাড়িয়ে দেয় আমার ভাবনা কে।
ঘর্মাক্ত শরীরে অসম্ভব ক্লান্তি বুজিয়ে দেয় চোখের পাতা...
স্বপ্ন তুমি এসেছিলে কি??
আমার স্বপ্নে আজও উত্তুরে বাতাস করা নেড়ে যায় পূবের জানালাগুলিতে; আমি ফিরে যাই সেই ফিরে না পাওয়া সময়ে। আমার মনে পড়ে তেপান্তরের মাঠ, অচেনা চোখের কোনে জল, কথা না রাখা কথারা জাগিয়ে রাখে রাতের পর রাত, আমার ঘুম আসে না, আমি ফিরে যাই বকুল তোর কাছে। বকুল, আমায় ফিরিয়ে দিস না, এই অচেনা অজানা শহরে আমার কোনো অলি গলি জানা নেই, আমি চেনা পথ বার বার ভুল করে ফিরে যাই তোর উঠোনে আর ভিজে যাই তোর বৃষ্টিতে।
জানিস বকুল, শেষ কবে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম আমার মনে নেই; অনেকদিন পর আজ আবার ভিজলাম বৃষ্টিতে। জানিস বকুল, বৃষ্টিকে নিয়ে আমার কোনো বিশেষ স্মৃতি মনে নেই, বিশেষ কোনো ঘটনা নেই যা আমাকে নাড়িয়ে দেয়, আমার মনে পড়ে যায় ছেলেবেলার বৃষ্টি; আমার কান্না পায়, কাঁদতে পারিনা, বৃষ্টি প্লিস একটু ফিরে আয়, তোর জলে ভিজে একটু কাঁদতে দে আমায়।।
0 comments