“দুঃখ তোমার কেড়ে নিতে চায় যত
এমন একটা নাছোড়বান্দা ছেলে
সুখের দিনে নাইবা পেলে পাশে
খবর দিও হঠাৎ কান্না পেলে”
পৌনঃপুনিকতা বড্ড বাজে জিনিস; জীবনে কোনো গল্প নেই, জীবনটাকে একটা সরলরেখা হিসেবে চিন্তা করে সময়নিরপেক্ষ যে কোনো একটা অংশ তুলে নিলেই পুরো জীবনের রেপ্লিকা পাওয়া যাবে। কোনো গল্প নেই, কোনো বিশেষ ঘটনা নেই; বড্ড খারাপ।
শহরের কোনো পুকুরের পাড়ে মাটি নেই। সেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মাঝে আমি বসে থাকবো; একা এবং একাকী। পুকুরের পাশ দিয়ে চলে গেছে কালো পিচ মোড়ানো একটা পথ, সেই পথটাও ফাঁকা থাকবে। আমি বৃষ্টির মাঝে তাকিয়ে দেখবো নীলছাতা মাথায় দিয়ে গুটিগুটি পায়ে কে যেন এগিয়ে আসছে।
মন, অনেক বড় বড় শহর দেখেছো তুমি; সেই সব শহরের ইট পাথর, কথা কাজ আশা নিরাশার ভয়াবহ হৃত চক্ষু আমার মনের বিঃস্বাদের ভেতর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে; কিন্তু তবুও শহরের বিপুল মেঘের কিনারে সূর্য্য উঠতে দেখেছি, বন্দরের ওপারে সূর্য্যকে দেখেছি মেঘের কমলা রঙের ক্ষেতের ভিতর প্রণয়ী চাষার মত বোঝা রয়েছে তার; শহরের গ্যাসের আলো উঁচু উঁচু মিনারের উপরও দেখেছি, নক্ষত্রেরা অজস্র বুনো হাঁসের মত কোন দক্ষিন সমুদ্রের দিকে উড়ে চলেছে। হায় মেঘ, পর্যটক কুমারী মেঘ, তুমি উড়ে গেলে সবুজ কান্না ঝরবে নীলকন্ঠ পাখির চোখে।
এই শহরের কঠিন আস্তরনের উপর ঋতুচক্র তার কেরামতি দেখাতে পারে না। বুড়ো যাদুকরের মত সে ধুঁকতে ধুঁকতে আসে বটে, কিন্তু পরনের ছেঁড়া পাতলুন নোংরা জামা পথে পথে ঘুরে বেড়িয়ে ফিরে যেতে হয় তাকে। এ শহর তার জায়গা নয়। একটা মস্ত শিউলি গাছে শরৎকালে অজস্র ফুল ফোটে বটে, কিন্তু সেই গাছটার তলায় ডাই হয়ে জমে থাকে আবর্জনা, ময়লা জল। গাছ ফুল ফোটায়, ফুল ঝরায়, কেউ ফিরেও তাকায় না। শুধু আমি লোভির মত চেয়ে থেকে ভাবি এক আঁজলা যদি পাওয়া যেত।
মাঝরাতে অন্ধকার এক জংশনে গাড়ি থেকে নামি। ঘোর অন্ধকার প্লাটফর্ম পেরিয়ে ওপাশে এক অন্ধকার ট্রেনের কামরায় উঠি; একা। ট্রেন ছাড়ে, দুলে দুলে চলে। কোথায় যাচ্ছি তা প্রশ্ন করতে নেই। কেউ জবাব দেবে না। কিন্তু জানিস বকুল, জানালায় তোর মুখ ভেসে ওঠে, করুন তীব্র এক স্বরে তুই বলিস “ পৃথিবী আর সুন্দর থাকবে না যে; ফুল ফুটবে না আর, ভোর আসবে না।” আমি একটু হাসবার চেষ্টা করি, বলি, বড় মারে এরা; বড্ড ভুল বোঝে। প্রত্যাখান করে। তার চেয়ে এই লম্বা ঘুমই ভালো। অনেক দিন ধরে আমি এইরকম ঘুমিয়ে পড়তে চাইছি।
“দুঃখ তোমার কেড়ে নিতে চায় যত
“তুই খালি আমারও বই খাতায়
“হ্যারিকেনের মায়াবী আলোয় শুরু হয়েছিল শৈশব। বাড়িতে রেডিও এলো যখন আমার চোদ্দ বছর বয়স। গ্যাসের উনুন, সে এক ইতিহাস। এক জীবনের মধ্যে আমার কয়েকবার জন্মান্তর ঘটে গেলো। টেলিভিষন, মাইক্রোওয়েভ, কম্পিউটারের ঘেরটোপের মধ্যে বসেও কেন যেন ভ্রমবেশে চমকে উঠি, জীবনের কন্ডাক্টর কেউ কি কেবলই চেঁচিয়ে বলছে , পিছনের দিকে বড্ড এগিয়ে গেছেন স্যার।”
আমি যখন আকাশ হয়ে যাবো




প্রিয়তি
আমার হারিয়ে যাওয়া কবিতা ,
গত আশ্বিনে আমি আমার পঁচিশতম জন্মদিন পার হয়ে এলুম। আমি জানি আমি খুব দীর্ঘ্যজীবি হব-আমার কুষ্ঠিতে এমনই লেখা আছে। পঁচিশের ঘরে বসে আমি তাই সামনের দীর্ঘ্য জীবনের দিকে চেয়ে অলস অ ধিরস্থির হয়ে বসে আছি। বিছানায় শুয়ে হাত বাড়ালেই যেমন টেবিলের উপর সিগারেট প্যাকেট, দেশালাই, জলের গ্লাস কিংবা ঘড়ি ছোঁয়া যায় মৃত্যু আমার কাছে ততটা ছোঁয়ার নয়। মাঝে মাঝে জোৎস্নারাতে আমার জানলা খুলে চুপচাপ বসে থাকি। হালকা বিশুদ্ধ চাঁদের আলো আমার কোলে পড়ে। ক্রমে ক্রমে আমার রক্তের মধ্যে ডানা নেড়ে জেগে ওঠে একটি মাছ। শরীর ও চেতনা জুড়ে তাঁর অবিরল খেলা শুরু হয়। আমার চেতনার মধ্যে জেগে উঠে একটি বোধ, আমারই ভেতর থেকে কে যেন বড় মৃদু এবং মায়ার সুরে ডাক দেয়, "সুমন, আমার সুমন।" অকারনে চোখের জল ভেসে যায়। আস্তে আস্তে জানালার চৌকাঠের উপর মাথা নামিয়ে রাখি। মায়ের হাতের মত মৃদু বাতাস মাথা থেকে পিঠ পর্যন্ত স্পর্শ করে যায়। তখন মনে পড়ে- সুমন, তোমার জীবন খুব একার হবে।
জীবনে কিছু কিছু ঋন আছে যা কোনদিনই শোধ করা যায়না, শুধু স্বীকার করা যায় মাত্র। তোর কাছে আমি তেমনই একটা ঋনে ঋণি।